সাংবাদিকতা সবসময় সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং, বিতর্কিত এবং মহৎ পেশাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, এবং বাংলাদেশের মতো দেশে এই পেশা আরও বিপজ্জনক। সাংবাদিকরা শুধু খবর পরিবেশনকারী নন; তারা সত্যের রক্ষক, জনগণের কণ্ঠস্বর এবং আমাদের জাতির মেরুদণ্ড। তারা সঠিক এবং সময়োপযোগী তথ্য আমাদের কাছে পৌঁছে দিতে তাদের জীবন উৎসর্গ করেন এবং অসীম ঝুঁকি গ্রহণ করেন।
আমাদের কাছে খবর পড়া বা দেখা যত সহজ মনে হয়, সাংবাদিকদের কাজ ততটাই কঠিন। প্রতিটি সংবাদের পেছনে রয়েছে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, আত্মত্যাগ এবং সাহস। তারা নিজেদের জীবন, নিরাপত্তা, এমনকি পরিবারের স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মুখে ফেলে কাজ করেন, যাতে আমরা তথ্যপ্রাপ্ত হতে পারি।
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বাস্তবতা আরও নির্মম। আমরা অসংখ্যবার দেখেছি সাংবাদিকরা জীবন হারিয়েছেন, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, অন্যায়ভাবে কারাবাস করেছেন এবং কখনও কখনও নির্বাসিত হতে বাধ্য হয়েছেন। তারা শুধু নিজেদের জন্য নয়, তাদের পরিবারের জন্যও ঝুঁকি নেন। এই আত্মত্যাগ করা হয় জনগণের তথ্যের অধিকার সুরক্ষিত করার জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এবং সত্য প্রকাশের জন্য।
সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের সমাজ এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জন্য যথেষ্ট সহযোগিতা নেই। অনেক সাংবাদিক কম বেতনে কাজ করেন এবং আর্থিক কষ্টে দিনযাপন করেন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশার প্রতি এই অবহেলা আমাদের জাতি হিসেবে লজ্জিত হওয়া উচিত।
হ্যাঁ, আমরা মাঝে মাঝে কিছু সাংবাদিককে নিরপেক্ষতা হারিয়ে রাজনৈতিক দলের পক্ষে কথা বলতে দেখি। তবে এটি প্রায়ই ঘটে তাদের দুর্বল অবস্থার কারণে— হোক সেটা চাপ, হুমকি বা আর্থিক সংকট। এর সমাধান হলো শাস্তি নয়, বরং ক্ষমতায়ন। যদি সাংবাদিকদের যথাযথ আর্থিক সহায়তা, সুরক্ষা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান করা হয়, তবে তারা অনেক বেশি সততার সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম হবেন।
আমি বর্তমান সরকার এবং ভবিষ্যতের সকল সরকারকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ জানাই, সাংবাদিকদের কল্যাণে বিশেষ গুরুত্ব দিন। তাদের জন্য উপযুক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা, স্বাধীনতা এবং ন্যায্য বেতন নিশ্চিত করুন, যাতে তারা ভয় বা প্রভাবমুক্ত থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। উন্নত দেশগুলিতে সাংবাদিকদের সম্মান, ন্যায্য বেতন এবং স্বাধীনতা দেওয়া হয়। বাংলাদেশকেও এই পথ অনুসরণ করতে হবে।
যদি আমরা সাংবাদিকতাকে একটি মহৎ পেশা হিসেবে রাখতে চাই এবং গণতন্ত্রের স্তম্ভ হিসেবে দেখতে চাই, তবে আমাদের একটি সুরক্ষিত এবং সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সাংবাদিকরা আমাদের ভাই-বোন। তারা সমাজের অপরিহার্য অংশ, যারা ক্লান্তিহীনভাবে আমাদের খবর পৌঁছে দেন, গণতন্ত্র রক্ষা করেন এবং নিঃস্বদের কণ্ঠ দেন।
আমাদের দায়িত্ব হলো সাংবাদিকদের পাশে থাকা, তাদের অবদানকে সম্মান জানানো এবং তাদের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা। আসুন আমরা একসঙ্গে তাদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাই, তাদের অধিকার রক্ষা করি এবং বাংলাদেশে সাংবাদিকতার মান উন্নয়নে কাজ করি। একটি জাতি কখনই সফল হতে পারে না যদি তার গণমাধ্যম স্বাধীন এবং শক্তিশালী না হয়। আমাদের সাহসী সাংবাদিকদের নির্ভীক কাজ আমাদের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থন ও প্রশংসার দাবি রাখে।
প্রযুক্তি সহায়তায়: Star Web Host It
Leave a Reply